যক্ষা রোগের ঔষধ কোথায় পাওয়া যায়
বর্তমানে বাংলাদেশে দিন দিন যক্ষা রোগীদের সংখ্যা বাড়ছে। অনেকেই মনে করেন যক্ষা হলে মৃত্যু অনিবার্য। কিন্তু এখন এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। সঠিক সময়ে যক্ষার চিকিৎসা নিলে যক্ষা পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়। তাই আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে যক্ষা রোগ সম্পর্কে কিছু তথ্য জানবো।আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে যক্ষা রোগ কি, যক্ষা রোগের লক্ষণ, কিভাবে যক্ষা রোগ ছড়ায়, যক্ষা রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি, যক্ষা প্রতিরোধ করার উপায়, যক্ষা রোগের চিকিৎসা, এবং যক্ষা রোগের জন্য ওষুধ কোথায় পাওয়া যায় সেই সম্পর্কে জানব।
আমরা আজ এই আর্টিকেলে আলোচনা করব যক্ষা রোগের ঔষধ কোথায় পাওয়া যায়
যক্ষা রোগ কি
যক্ষা মাইক্রোব্যাকটৈরিয়াম টিউবারক্লোসিস নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ফলে সৃষ্টি হয়ে থাকে।এটি একটি মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি। এছাড়াও যক্ষা রোগির সংস্পর্শে আসলে যক্ষা রোগ ছড়িয়ে পড়ে।অধিকাংশ সময় যক্ষা ফুসফুসে আক্রান্ত করে।তবে শরীরের বিভিন্ন জায়গা যক্ষা রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
যক্ষা রোগের লক্ষণ
১.তিন সপ্তাহের বেশি কাশি স্থায়ী হওয়া।
২.কাশির সাথে জ্বর থাকা।
৩.ওজন কমে যাওয়া।
৪.ক্ষুধা কমে যাওয়া।
৫.ক্লান্তি বা দুর্বল ভাব হওয়া।
৬.শরীরের যেকোনো জায়গায় মাংসের পিন্ডের মত ফুলে যাওয়া।
৭.বুকে ব্যথা হওয়া।
৮.কাশির সাথে শ্লেষ্মা হওয়া।
উপরোক্ত লক্ষণ গুলি দেখা দিলে সাথে সাথে এ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এবং যক্ষা পরীক্ষা করে হতে হবে যে আপনি যক্ষয় আক্রান্ত হয়েছেন কিনা।
কিভাবে যক্ষা রোগ ছড়ায়
যক্ষা একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। সাধারণত মাইক্রো ব্যাকটেরিয়াম টিউবারক্লোসিস নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের মাধ্যমে যক্ষা রোগ হয়ে থাকে। এছাড়া যক্ষা বায়ুবাহিত রোগ। বাতাসের মাধ্যমেও মানুষের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। এক ব্যক্তির থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে হাঁচি কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে।অধিকাংশ সময়ে রক্ষা ফুসফুসে আক্রান্ত করে। আর ফুসফুসে আক্রান্ত করলেই একজন থেকে আরেকজনের শরীরে যক্ষা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। শরীরের অন্য কোন জায়গায় আক্রান্ত হলে এটি অন্য কারো শরীরে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে।
যক্ষা রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি
যক্ষা কয়েকটি পদ্ধতিতে নির্ণয় করা যায়। প্রথম পর্যায়ে যক্ষা রোগ নির্ণয় করতে হলে নিন্মুক্ত টেস্ট করা যেতে পারে।
১.Sputum AFB(স্পুটাম এএফবি)
২.MT Test
৩.Smear Test
৪.x-ray(এক্স-রে)
৫.CT scan(সিটি স্ক্যান)
৬.C/S বা কালচার টেস্ট
এছাড়াও বর্তমানে আধুনিক ভাবে পরীক্ষা করার মাধ্যমে যক্ষা সনাক্ত করা হয়।
১.FNAC(এফএনএসি)
২.Gene Expert(জিন এক্সপার্ট)
যক্ষা রোগের চিকিৎসা
যক্ষা রোগের চিকিৎসা সম্পন্ন ও বিনামূল্যে তা হয়ে থাকে। যক্ষা রোগের লক্ষণ বা ধরন অনুযায়ী রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।যক্ষা যদি সুপ্ত বা প্রচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে তাহলে এন্টিবায়োটিক এর মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এই চিকিৎসা যক্ষা ধরন অনুযায়ী স্বল্পমেয়াদি বা দীর্ঘ মেয়াদীও হতে পারে। তবে যক্ষা রোগীদের কমপক্ষে ছয় থেকে নয় মাস পর্যন্ত ওষুধ খেতে হয়। এর ভিতর ওষুধ খাওয়া বাদ দিলে পুনরায় যক্ষা রোগের লক্ষণ দেখা দেয় এবং এর মাধ্যমে একজন থেকে অন্য জনের মধ্যে ছড়ানোর প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পায়।
যক্ষা রোগের ঔষধ কোথায় পাওয়া যায়
বাংলাদেশের যেকোনো জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সদর হসপিটাল, বক্ষব্যাধি ক্লিনিক, যেকোনো ধরনের এনজিও ক্লিনিক বা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিনামূল্যে যক্ষা রোগের ঔষধ দেওয়া হয় বা বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
যক্ষা প্রতিরোধ করার উপায়
১.জন্মের পরপরই প্রতিটি শিশুকে বিসিজি (BCG) টিকা দেওয়া।
২.আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি-কাশির সময় রুমাল ব্যবহার করা।
৩.আক্রান্ত ব্যক্তির কফ বা থুতু যেকোনো নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা এবং তা মাটিতে পুঁতে রাখা।
৪.ধূমপান পরিহার করা।
৫.আক্রান্ত ব্যক্তি ওষুধের ডোজ সম্পন্ন করেছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া।
৬.শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা ।
সর্বোপরি যক্ষা রোগের জন্য সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। যার ফলে মৃত্যু হতে পারে। তাই যক্ষা রোগের লক্ষণ দেখা দিলে সাথে সাথে চিকিৎসা করা উচিত। নিজেরা যক্ষা মুক্ত থাকতে পারলে মুক্ত থাকতে পারবে।