রক্তে শ্বেত কণিকার সংখ্যা অতিমাত্রায় বেড়ে গেলে কোন রোগটি হয়
মানুষের শরীরের জন্য শ্বেত রক্তকণিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শ্বেত রক্তকণিকা মূলত দেহের সংক্রামক ব্যাধি থেকে শরীরকে রক্ষা করে।কিন্তু আমরা অনেকেই শ্বেত রক্তকণিকা সম্পর্কে জানিনা। তাই আমরা আজ এই পোষ্টের মাধ্যমে শ্বেত রক্তকণিকা কি, শ্বেত রক্তকণিকা বৃদ্ধির কারণ, শ্বেত রক্তকণিকা বেড়ে গেলে কি হয়, এবং শ্বেত রক্তকণিকা কমে গেলে কি হয় সম্পর্কে জানব।
আমরা আজ এই আর্টিকেলে আলোচনা করব রক্তে শ্বেত কণিকার সংখ্যা অতিমাত্রায় বেড়ে গেলে কোন রোগটি হয়
শ্বেত রক্তকণিকা কি
শ্বেত রক্তকণিকা হল রক্তে থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ কোষ যা শরীরে বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক রোগ বা ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস এবং অন্যান্য বাহ্যিক আক্রমণ বস্তু থেকে রক্ষা করে।শ্বেত রক্তকণিকা কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় লিকোসাইট বলা হয়।
শ্বেত রক্তকণিকা বৃদ্ধির কারণ
সাধারণত লিউকোমিয়া বা সাবলিওকোমিয়ার জন্য শ্বেত রক্তকণিকা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও লিউকোময়েড রিএকশন এর কারনে শ্বেত রক্ত কণিকা বৃদ্ধি পেতে পারে।সংক্রামক বা প্রদাহ জনিত কারণেও শ্বেত রক্তকণিকা বৃদ্ধি পেতে পারে।
রক্তে শ্বেত কণিকার সংখ্যা অতিমাত্রায় বেড়ে গেলে কোন রোগটি হয়
শ্বেত রক্তকণিকা অতিমাত্রায় বৃদ্ধির কারণে লিউকোমিয়া বা অস্থিমজ্জায় ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়। এছাড়া শরীরে বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রদাহের সৃষ্টি হয়।
শ্বেত রক্তকণিকা কমে গেলে কি হয়
শ্বেত রক্তকণিকা কমে গেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় যার । ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের মরণব্যাধি ভাইরাসের আক্রমণ ঘটে।অনেক সময় শ্বেত রক্তকণিকা কমে যাওয়ার ফলে নিউট্রোপেনিয়া নামক রোগে আক্রান্ত হতে পারে ।
শ্বেত রক্তকণিকা কোথায় উৎপন্ন হয়
শ্বেত রক্তকণিকা শরীরের অস্থিমজ্জায় উৎপন্ন হয়ে শরীরের টিস্যুতে পৌঁছায় এবং সেখান থেকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে।শ্বেত রক্তকণিকা শরীরে কয়েক ঘন্টা বেঁচে থাকে বেশি হলে কয়েক মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
শ্বেত রক্তকণিকার শ্রেণীবিভাগ
শ্বেত রক্তকণিকা পাঁচটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়।
১.নিউট্রোফিলঃ শ্বেত রক্ত কণিকার ভেতরে নিউট্রোফিল সবথেকে বেশি থাকে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সচল করে রাখে।
২.লিম্ফোসাইটঃ লিম্ফোসাই হলো শ্বেত রক্তকণিকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রক্তকণিকা। যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।লিম্ফোসাইট আবার দুই ধরনের হয়ে থাকে বি লিম্ফোসাইট এবং টি লিম্ফোসাইট।
৩.ইওসিনােফিলঃ শ্বেত রক্তকণিকার আরেকটি উপাদান ইওসিনােফিল। এটি মূলত শরীরে যে কোন ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও শরীরে এলার্জি পরিমাণ বেড়ে গেলে মাত্রা বেড়ে যায়।
৪.মনোসাইটঃ মনোসাইট শ্বেত রক্ত কণিকার ভিতরে সবথেকে বড় রক্ত কণিকা।মনোসাইট মূলত ম্যাক্রোফেজ ও ডেনড্রাইটিক কোষের মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে।
৫. বেসােফিলঃ শ্বেত রক্তকণিকার ভিতরে ব্যাসোফিল রক্ত কণিকার সংখ্যা সবচেয়ে কম।ব্যাসোফিল কিছুটা ইওসিনােফিল মতোই কাজ করে।
শ্বেত রক্তকণিকা কমানোর উপায়
সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে শ্বেত রক্তকণিকা কিছু ওষুধের মাধ্যমে সহজে কমিয়ে আনা যায়। এছাড়াও কিছু ঘরোয়া পদ্ধতিতেও শ্বেত রক্তকণিকা কমানো যায়। নিচে পদ্ধতি গুলো আলোচনা করা হলো।
১.রুটিন অনুযায়ী যদি শারীরিক চর্চা বা ব্যায়াম করা যায় তাহলে শ্বেত রক্ত কণিকার পরিমাণ অনেকাংশে কমানো যায়।
২.ভিটামিন বি ও ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার খাওয়ার মাধ্যমেও শরীরে শ্বেত রক্তকণিকার পরিমাণ কমানো যায় ।
৩.শ্বেত রক্তকণিকা কমানোর জন্য হলুদ একটি কার্যকারী খাবার। যেহেতু হলুদের অসংখ্য গুণ রয়েছে। তাই শ্বেত রক্তকণিকা নিয়ন্ত্রণে বা কমানো জন্য প্রতিদিন হলুদ খাওয়া যেতে পারে।
৪.এছাড়াও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে যা সে তক্তকণিকা নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করবে।
সর্বোপরি শ্বেত রক্তকণিকা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী । তাই আমাদের শরীরে শ্বেত রক্তকণিকার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেই আমরা বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারবো।