মাসিকের সময় পেটে ব্যাথার ঔষধ
মাসিক প্রতিটা নারী জীবনে একটি স্বাভাবিক ঋতুচক্র। প্রতি মাসেই নারীদের এই মাসিক পিরিয়ড হয়ে থাকে। কিন্তু অনেক সময় এই মাসিক বা পিরিয়ডের সময় নারীদের প্রচন্ড ব্যথার সম্মুখীন হতে হয়।তাই আমাদের আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন মাসিকের সময় পেটে ব্যথার কারণ, মাসিকের সময় পেটে ব্যাথা হলে করণীয়, পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ইসলামিক উপায়, পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর খাবার, পিরিয়ডের ব্যথা হলে কি বাচ্চা হয় না এবং মাসিকের সময় পেটে ব্যাথার ঔষধ সম্পর্কে।
আমরা আজ এই আর্টিকেলে আলোচনা করব মাসিকের সময় পেটে ব্যাথার ঔষধ
মাসিকের সময় পেটে ব্যথার কারণ
বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ নারী মাসিকের সময় যন্ত্রণাদায়ক ব্যথার সম্মুখীন হয়ে থাকে। এর প্রধান কারণ হলো কোষে উৎপন্ন হওয়া প্রোস্টাগ্ল্যানডিনস। প্রোস্টাগ্ল্যানডিনস একটি চর্বিযুক্ত রাসায়নিক পদার্থ যা মাসিকের সময় বেড়ে যায়। যার ফলে মাসিকের সময় ব্যথা হয়।
মাসিকের সময় পেটে ব্যাথা হলে করণীয়
মাসিকের সময় পেটে ব্যথা হলে কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলে মাসিকের ব্যথা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে।
১.ল্যাভেন্ডার তেলঃ মাসিকের সময় প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হলে ল্যাভেন্ডার তেল পেটে মালিশ করলে মাসিকের ব্যথা কমে যেতে পারে।
২.গরম পানির সেকঃ গরম পানি সেক মাসিকের ব্যথা দূর করার জন্য বেশ কার্যকারী। মাসিকের ব্যথা অনুভূত হলে গরম পানির সেক দিলে মাসিকের ব্যথা কমে যেতে পারে।
৩.আদাঃ আদা শরীরের যেকোনো ব্যথা সারাতে বেশ কার্যকরী। তাই মাসিকের সময় পেটে ব্যথা অনুভূত হলে আবার রস খেলে ব্যথা কমে যেতে পারে।
৪.মধু ও অ্যালোভেরাঃ মাসিকের ব্যথা কমাতে মধু ও অ্যালোভেরার রস খুব উপকারী। মাসিকের ব্যথা অনুভূত হলে অ্যালোভেরা রসের সাথে মধু মিশিয়ে পান করলে মাসিকের ব্যথা কমে যেতে পারে।
৫.গ্রিন টিঃ গ্রিন টি শরীরের জন্য খুবই উপকারী এছাড়াও মাসিকের ব্যথা কমাতে গ্রিন টি বেশ কার্যকরী মাসিকের সময় প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হলে গ্রিন টি পান করলে ব্যথা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
৬. ব্যায়াম বা শরীর চর্চাঃ মাসিকের সময় প্রচন্ড ব্যাথা অনুগত হলে হালকা ব্যায়াম করলে মাসিকের ব্যথা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
৭.মাসিকের সময় নারীদের শরীরে শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়। তার জন্য পুষ্টি কোন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
৮.মাসিকের সময় ঠান্ডা পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ ঠান্ডা পানি মাসিকের ব্যথা আরও বাড়িয়ে দেয়।
৯.মাসিকের সময় পেটে ব্যাথা অনুভূত হলে কাঁচা পেঁপে খাওয়া যেতে পারে। কাঁচা পেঁপে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ইসলামিক উপায়
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থতা থেকে সুস্থতা পেতে আল্লাহর কাছে সবসময় দোয়া করতেন।
এ সম্পর্কে সহীহ মুসলিম ও আবু দাউদ হাদিস এসেছে, হযরত ওসমান ইবনে আবুল আস আস-সাকাফি বর্ণনা করেন ,একবার তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পেটে ব্যথার কথা জানান, তিনি বলেন পেটে ব্যথা আমাকে অস্থির করে তুলেছে, তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তুমি তোমার ব্যাথার স্থানে ডান হাত রেখে তিনবার ”বিসমিল্লাহ” বলো,তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিন্মুক্ত দোয়াটি সাতবার পড়তে বললেন। তিনি উক্ত আমলটি করার পর সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তার কষ্ট দূর করে দেন।
দোয়াটি হলোঃ
أعوذُ باللهِ و قُدرتِه من شرِّ ما أَجِدُ و أُحاذِرُ
বাংলা উচ্চারণঃ ”আউজু বিইজ্জাতিল্লাহি ওয়া কুদরাতিহি মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহাজিরু।”
অর্থঃ ”আল্লাহর মর্যাদা ও তার কুদরতের উসিলায় আমি যা অনুভব ও ভোগ করছি, তা থেকে মুক্তি চাচ্ছি।”
মাসিকের সময় প্রচন্ড ব্যাথা অনুভূত হলে উপরোক্ত দোয়াটি পাঠ করা যেতে পারে। উপরোক্ত দোয়াটি পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহ ব্যথা কমিয়ে দিতে পারেন।
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর খাবার
মাসিক বা পিরিয়ড চলাকালীন নারীদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এ সময় শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তাই এ সময় খাবারের দিকটা খেয়াল রাখা উচিত।
১.মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাতের কারণে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তাই এ সময় প্রচুর পরিমাণে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন- মাছ, মাংস, কলিজা, কলমি শাক, ডিম, খেজুর, কচুশাক, পুঁইশাক ইত্যাদি খাওয়া উচিত।
২.মাসিকের সময় প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। কারণ মাসিকের সময় শরীরে পানি শূন্যতার সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এ সময় প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
৩.মাসিকের সময় প্রচুর পরিমাণে আয়রনের সাথে সাথে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেতে হবে যেমন - বেদানা, কলা, পেয়ারা, আমড়া, লেবু, কমলা, আপেল, তরমুজ ইত্যাদি খাওয়া উচিত।
৪.মাসিকের সময় ডার্ক চকলেট খাওয়া যেতে পারে। কারণ তার চকলেটে শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে।
৫.মাসিকের সময় আদা চা খাওয়া যেতে পারে । আদা চা মাসিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
পিরিয়ডের ব্যথা হলে কি বাচ্চা হয় না
এখন প্রায় প্রতিটা নারীর মনে একটাই প্রশ্ন যে মাসিকের সময় পেটে ব্যাথা হলে কি বাচ্চা হয় না?না, এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা মাসিকের সময় পেটে ব্যথা হলেও বাচ্চা হয়। কারণ এখন প্রায় প্রতিটা নারীদেরই মাসিকের সময় কম বা বেশি পেটে ব্যথা হয়ে থাকে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
মাসিকের সময় পেটে ব্যাথার ঔষধ
মাসিকের সময় পেটে ব্যথা একটু কমন সমস্যা।মাসিকের ব্যথা কমানোর জন্য অধিকাংশ নারী প্রাথমিক পর্যায়ে প্যারাসিটামল খেয়ে থাকেন। তবে মাসিকের ব্যথা কমানোর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা উচিত। এছাড়াও মাসিকের ব্যাথা কমানোর জন্য ibuprofen (আইবুপ্রোফেন) naproxen সোডিয়াম ঔষধ খাওয়া যেতে পারে। কারণ এই ওষুধগুলো মাসিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
সর্বোপরি নারীদের জীবনে মাসিক ও পিরিয়ড একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া কারণ। এর মাধ্যমেই নারীরা মা হওয়ার সুযোগ পায়। তাই আমাদের এই মাসিক বা পিরিয়ড সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। তাই আমাদের আজকের এই পোস্টটি পড়লে আপনারা মাসিক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।