সিজারের পর পেটে ব্যথা কতদিন থাকে
বাংলাদেশে সিজার শব্দটা একটি কমন শব্দ। প্রায় অধিকাংশ নারী সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা জন্ম দিয়ে থাকেন। কিন্তু এই সিজারের সময় নারীদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তাই আমাদের আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন সিজারের পর পেটে ব্যাথা কত দিন থাকে, সিজারের পর সেলাইয়ে ব্যাথা হলে করণীয়, সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ, সিজারের পর শোয়ার নিয়ম,সিজারের পর কি কি করা যাবে না এবং সিজারের পর তলপেটে ব্যথা হলে করণীয় সম্পর্কে।
আমরা আজ এই আর্টিকেলে আলোচনা করব সিজারের পর পেটে ব্যথা কতদিন থাকে
সিজারের পর পেটে ব্যথা কতদিন থাকে
সিজারের প্রথম সপ্তাহ অতিরিক্ত ব্যথা থাকে। কিন্তু তারপরে আস্তে আস্তে ব্যথা কমতে থাকে দ্বিতীয় সপ্তাহ হালকা ব্যথা থাকতে পারে। তবে যদি দ্বিতীয় সপ্তাহে অতিরিক্ত ব্যাথা থাকে তাহলে ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে।
সিজারের পর সেলাইয়ে ব্যাথা হলে করণীয়
১.অতিরিক্ত ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
২.অতিরিক্ত সিড়ি বেয়ে উঠা নামা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩.সঠিক নিয়ম মেনে বসা বা শুতে হবে।
৪.সিজারে পার পেটে সেলাই এর ব্যাথা কমানোর জন্য হালকা ব্যায়াম বা শারীরিক চর্চা করতে হবে।
৫.চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধের ডোজ কমপ্লিট করতে হবে।
সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ
অনেক সময় সিজারের পরে সেলাইয়ের জায়গায় ইনফেকশন দেখা দেয়। কিন্তু আমরা ইনফেকশনের লক্ষণ না বোঝার কারণে বুঝতে পারি না যে ইনফেকশন হয়েছে কিনা। তাই নিতে ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো দেওয়া হলঃ
১.সিজারের পর সেলাইয়ের জায়গা প্রচন্ড ব্যথা হওয়া।
২.সেলাইয়ের জায়গা ফুলে যাওয়া বা লাল হয়ে যাওয়া।
৩.সেলাইয়ের জায়গা থেকে তরল জাতীয় পদার্থ যেমন পুজ বা রক্ত বের হওয়া।
৪.প্রসাবের সময় অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া।
৫.তলপেটে অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া।
৬.হাত পা ফুলে যাওয়া।
৭.প্রসাব বা মাসিকের রাস্তা দিয়ে তরল পদার্থ বা রক্ত বের হওয়া।
৮.শরীরে জ্বর বা কাঁপুনি হওয়া।
উপরোক্ত লক্ষণগুলোই দেখা দিলে বুঝতে হবে সেলাইয়ের জায়গায় ইনফেকশন হয়েছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
সিজারের পর শোয়ার নিয়ম
সিজারের পরে শোয়ার বা ঘুমাতে যাওয়ার কিছু নিয়ম আছে। এই নিয়ম মেনে ঘুমালে সেলাইয়ের জায়গায় ব্যথা কম অনুভূত হয়।
১.সিজারের পর সবসময় চিত বা এক পাশ কাত হয়ে উত্তম । এতে সেলাইয়ের উপরে চাপ কম পড়ে এবং ব্যথা কম অনুভূত হয়।
২.সিজারের পর সবসময় পানিতে বালিশ দিয়ে ঘুমালে আরাম পাওয়া যায় এবং সেলাইয়ের জায়গায় ব্যথা কম লাগে।
৩.সিজারের পর নরম বিছানায় শোয়া উত্তম।
৪.মাথার নিচে অতিরিক্ত উঁচু বালিশ দিয়ে না ঘুমানো উত্তম। এতে সেলাইয়ের জায়গায় চাপ লাগে এবং ব্যথা অনুভূত হয়।
সিজারের পর কি কি করা যাবে না
সিজারের পর কিছুদিন কিছু কাজ করা বা খাওয়া-দাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
১.সিজারের পর অন্তত তিন মাস যে কোন ধরনের ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
২.সিজারের পর অতিরিক্ত সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩.সিজারের পর কিছুদিন সহবাস করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪.সিজারের পর অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৫.সিজারের পর অতিরিক্ত চা কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৬.সিজারের পর অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা কোমল জাতীয় পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৭. সিজারের পর গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি হয় এরকম খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
সিজারের পর অন্তত তিন মাস থেকে ছয় মাস উপরোক্ত কাজ বা খাওয়া-দাওয়া থেকে বিরত থাকা উত্তম।
সিজারের পর তলপেটে ব্যথা হলে করণীয়
সিজারের পর বিভিন্ন কারণে তলপেট ব্যথা হতে পারে। আগে জানতে হবে সিজারের পর তলপেট কেন ব্যথা করে। তাহলে সেই কাজগুলো করা থেকে বিরত থাকলে তলপেট ব্যথা কম হতে পারে।
১.সিজারের পরপরই ভারী জাতীয় কাজ করলে তলপেট ব্যাথা হতে পারে। তাই সিজারের পরে ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
২.সিজারের পরপরই স্বামী-স্ত্রী সহবাসের কারণে তলপেট ব্যাথা হতে পারে। তাই সিজারের পরপরই স্বামী-স্ত্রী সহবাস হতে বিরত থাকতে হবে।
৩.সিজারের পর ওষুধের ডোজ কমপ্লিট না করলে তলপেট ব্যাথা হতে পারে। তাই চিকিৎসকে পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধের ডোজ কমপ্লিট করতে হবে।
৪.সিজারের পার সঠিক নিয়মে না চুলে তলপেটে ব্যথা হতে পারে। তাই সিজারের পর সঠিক নিয়ম মেনে শুতে হবে।
৫.এছাড়াও সিজারের পর অতিরিক্ত তলপেটে ব্যথা হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায়
সিজারের পর সেলাই শুকাতে কতদিন সময় লাগে। এটি প্রায় সবার মনে একটি প্রমাণ প্রশ্ন থাকে। সিজারের পর সেলাই শুকাতে কমপক্ষে ছয় সপ্তাহ থেকে সাত সপ্তাহ সময় লাগে।
সিজারের কতদিন পর বাচ্চা নেওয়া যায়
সিজারের পর অন্তত ১ -২ বছর পরে বাচ্চা নেওয়া উত্তম। কারণ সিজারের পর জরায়ু মুখ কাঁচা থাকে সেটি শুকাতে এবং ঠিক হতে ৬ মাস বা ১ বছর সময় লাগে।
সর্বোপরি সিজারের পরে সঠিক নিয়ম মেনে জীবন যাপন করলে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব। তাই আমাদের আজকের এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা সিজার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।