টাইফয়েড জ্বরের ইনজেকশন দেওয়ার নিয়ম
বর্তমান বাংলাদেশের টাইফয়েড জ্বর এখন কমন জ্বরে পরিণত হয়েছে। এখন প্রায় ছোট বড় সবাই এই টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা যদি টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ, কারণ, প্রতিকার ও টাইফয়েড জ্বর হলে ইনজেকশন দেওয়ার নিয়ম সঠিকভাবে জানতে পারি তাহলে সহজেই আমরা এর চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হতে পারি।
আমরা আজ এই আর্টিকেলে আলোচনা করব টাইফয়েড জ্বরের ইনজেকশনের দেওয়ার নিয়ম
টাইফয়েড জ্বর কি এবং কেন হয়
টাইফয়েড জ্বর মূলত স্যালমনিলা টাইপি (Salmonella Typhi) নামক ব্যাকটেরিয়া আক্রমণের ফলে সৃষ্টি হয়। দূষিত খাবার বা দূষিত পানির মাধ্যমে এই টাইফয়েড জ্বরের ব্যাকটেরিয়া মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবেও এই টাইফয়েড জ্বর ছড়িয়ে থাকে।
টাইফয়েড জ্বর কত ধরনের
টাইফয়েড জ্বর দুই ধরনের:
১.টাইফয়েড জ্বর (Salmonella Typhi):টাইফয়েড জ্বর মূলত সালমোনিয়া টাইপি নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়। টাইফয়েড জ্বর মূলত দূষিত পানির মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে।
২.প্যারা টাইফয়েড জ্বর (Salmonella Paratyphi):স্যালমনিলা প্যারাটাইপি নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত জ্বরকে আমরা প্যারা টাইফয়েড জ্বর বলে থাকি। প্যারা টাইফয়েড জ্বর দূষিত পানি বা খাবার এই দুটোর মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে।
টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ
প্রথম পর্যায়ে জ্বর হলেই সেটা টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয় না।যার যদি ৫ থেকে ৭ দিনের বেশি শরীরে স্থায়ী থাকে তা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে আমরা সেটাকে টাইফয়েড হিসেবে বিবেচনা করি।
১.অতিরিক্ত মাত্রায় জ্বর হওয়া জ্বরের পরিমাণ ১০৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর উপরে থাকা।
২.ঘন ঘন জ্বর আসা।
৩.অতিরিক্ত মাথাব্যথা বা শরীরের ব্যথা হওয়া।
৪.অতিরিক্ত মাত্রায় শরীর দুর্বল লাগা।
৫.খাওয়ার ইচ্ছা কমে যাওয়া।
৬.অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হওয়া।
৭.হঠাৎ হঠাৎ প্রচন্ড পেটে ব্যথা অনুভূত হওয়া।
৮.জ্বরের সাথে সাথে অনেক সময় কাশি হওয়া।
৯.শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক সময় ডায়রিয়া বা বমি হওয়া।
১০.সব সময় শরীরে জ্বর থাকা।
১১.শরীরে জ্বরের সাথে সাথে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া।
টাইফয়েড জ্বরের রক্ত পরীক্ষা
টাইফয়েড জ্বর সনাক্তকরণের জন্য আমরা মূলত প্রথম পর্যায়ে ”ওয়াইডাল টেস্ট(Widal Test)” করে থাকে।এছাড়াও প্যারা টাইফয়েড জ্বর সনাক্তকরণের জন্য আমরা ফেব্রিল(Febrile) অথবা ত্রিপল(Triple) এন্টিজেন নামক টেস্ট করে থাকি।এছাড়াও অনেক সময় চিকিৎসক শরীরের স্যালমনিলা টাইপি (Salmonella Typhi) ব্যাকটেরিয়া আছে কিনা তার জন্য ব্লাড কালচার( Blood C/S) পরীক্ষা দিয়ে থাকেন।
টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসা
টাইফয়েড জ্বর সনাক্ত হওয়ার পর চিকিৎসক তাকে কিছু এন্টিবায়োটিক ওষুধ দিয়ে থাকেন। অনেক সময় টাইফয়েড জ্বর যদি প্যারা টাইফয়েড জ্বরে পরিণত হয় তাহলে চিকিৎসক তাকে এন্টিবায়োটিক ওষুধের পরিবর্তে এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন দেওয়ার পরামর্শ দেন।
টাইফয়েড জ্বরের ইনজেকশন দেওয়ার নিয়ম
টাইফয়েড বা প্যারা টাইফয়েড জ্বরের জন্য চিকিৎসক এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন দেয়ার পরামর্শ দেন। চিকিৎসক ডেইলি একটা করে সপ্তাহে সাতটা ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরামর্শ দেন। এছাড়াও অনেক সময় রোগীর জ্বরের কন্ডিশন বুঝে চিকিৎসা ডেইলি দুটো করে সপ্তাহে ১৪ টা ইনজেকশন দেওয়ার ও পরামর্শ দেন।
টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত
যেহেতু টাইফয়েড জ্বর একটি পানিবাহিত রোগ। তাই এই টাইফয়েড জ্বর হলে বেশি বেশি পানি জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত। পানীয় খাবার যেমনঃ ডাবের পানি, ফলের জুস, পাতিলেবুর জুস, পুদিনা পাতার রস, ঘোল ও মিল্কশেক খেতে পারেন। এছাড়াও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।