গর্ভাবস্থায় আয়রন ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
বর্তমান সময়ে গর্ভ অবস্থায় গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়।গর্ভকালীন সময়ে যদি সঠিক নিয়ম মেনে ক্যালসিয়াম আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড ঔষধ সেবন না করা হয় তাহলে গর্ভকালীন পরবর্তী সময়ে নানা ধরনের জটিলতার সম্মুখীন হতে হয় কিন্তু আমরা অনেকেই এই আয়রন ক্যালসিয়াম ওষুধ খাওয়ার নিয়ম জানিনা গর্ভকালীন সময়ে তাই আমরা আজ এই পোষ্টের মাধ্যমে গর্ভকালীন সময়ে আয়রন ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম, গর্ভাবস্থায় আয়রন ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ার উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় মায়েদের করণীয়, গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে এবং গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবেনা সম্পর্কে জানব।
আমরা আজ এই আর্টিকেলে আলোচনা করব গর্ভাবস্থায় আয়রন ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় আয়রন ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
চিকিৎসক গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস আয়রন ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেন। গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস এর পর থেকে আয়রন ও ক্যালসিয়ামের ট্যাবলেট খাওয়ার উপদেশ দেন।চিকিৎসক গর্ভাবস্থায় আয়রন ও ক্যালসিয়ামের ট্যাবলেট একই সময়ে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেন। কারণ একই সময়ে ক্যালসিয়াম ও আয়রন সেবন করলে ক্যালসিয়াম আয়রন ট্যাবলেটের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়।ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ার এক থেকে দেড় ঘন্টা পর আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম।
গর্ভাবস্থায় আয়রন ট্যাবলেট এর উপকারিতা
১. নবজাতকের শরীরে রক্তশূন্যতা দূর করার জন্য গর্ভাবস্থায় আয়রন ট্যাবলেট খাওয়া উচিত।
২. আয়রন ট্যাবলেট নবজাতকের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে।
৩. গর্ভাবস্থায় আয়রনের ঘাটতি জনিত কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে যা পরবর্তীতে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
৪. আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার ফলে গর্ভাবস্থায় শরীরে রক্তের কণিকা বৃদ্ধি পায় যার ফলে নবজাতকের শরীরে রক্ত কণিকা সঠিকভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে।
৫. গর্ভাবস্থায় আয়রনের ঘাটতি থাকলে নবজাতক সঠিকভাবে বৃদ্ধি পায় না যার ফলে নবজাতক ওজনে কম বা অপরিণত জন্ম নেয়।
গর্ভাবস্থায় আয়রন ট্যাবলেটের উপকারিতা অনেক। তাই গর্ভকালীন সময়ে প্রথম তিন মাসের পর থেকে ডেলিভারি হওয়া আগ পর্যন্ত নিয়মিত আয়রন ট্যাবলেট খাওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট এর উপকারিতা
১. ক্যালসিয়াম গর্ভাবস্থায় গর্ভে থাকা শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠন বা মজবুত করতে সাহায্য করে।
২. ক্যালসিয়াম গর্ভাবস্থায় মায়েদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কারণ গর্ভাবস্থায় গর্ভে থাকা নবজাতক মায়ের শরীর থেকে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করে তাই মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে যা পরবর্তীতে ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
৩. ক্যালসিয়াম গর্ভাবস্থায় মায়েদের নবজাতকের স্নায়ু ও পেশির কার্যকারিতা ধরে রাখতে সাহায্য করে ।
৪. ক্যালসিয়াম শরীরে রক্ত জমাট বাধার কাজে সাহায্য করে ।তাই গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়াম ওষুধ খাওয়া খুবই জরুরী । কারণ গর্ভাবস্থায় সঠিক সময়ে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ার ফলে ডেলিভারির সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
৫. গর্ভাবস্থায় অনেক মায়েদের হঠাৎ করেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয় । এ সময় যদি সঠিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট সেবন করা যায় তাহলে এই উচ্চ রক্তচাপ এর ঝুঁকি থেকে পরিত্রান পাওয়া যায়।
গর্ভাবস্থায় মায়েদের জন্য ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের পর থেকে ডেলিভারি হওয়া আগ পর্যন্ত নিয়মিত ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় মায়েদের করণীয়
১.গর্ভাবস্থায় কোন খাবার খাওয়ার আগে অবশ্যই হাত ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া উচিত ।
২.মাংস বা শাক সবজি পুরোপুরি সেদ্ধ করে খেতে হবে।
৩.ফলমূল খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে।
৪.গর্ভাবস্থায় কোন ধরনের ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৫.গর্ভাবস্থায় সারাদিনে চার থেকে পাঁচ বার খাবার খেতে হবে।
৬.গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে দিনের বেলায় কমপক্ষে দুই থেকে তিন ঘন্টা এবং রাতে ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
৭.গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস বেশি ঝুঁকিতে থাকে এবং শেষে তিন মাসও বেশি ঝুঁকিতে থাকে তাই এ সময় ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৮.গর্ব অবস্থায় নিয়মিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং চেকআপ করাতে হবে।
৯.গর্ভাবস্থায় হালকা শারীরিক ব্যায়াম করা।
১০.গর্ভাবস্থায় খাওয়ার পর দশ থেকে পনের মিনিট হাটা।
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে
গর্ভাবস্থায় ভিটামিন সি যুক্ত ফল যেমন- লেবু, কমলা, জাম্বুরা, মালটা খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও কলা, আপেল,তরমুজ গর্ভাবস্থায় খাওয়া যেতে পারে।এসব ফল গর্ভাবস্থায় মায়েদের জন্য খুবই উপকারী ।
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থায় কাঁচা অথবা পাকা পেঁপে, আনারস, আঙুর ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সংরক্ষণ করে রাখা যে কোন ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এসব ফল গর্ভাবস্থায় খেলে গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটা বাড়িয়ে দেয়।
সর্বোপরি গর্ভাবস্থায় যদি আমরা কিছু নিয়ম মেনে চলে তাহলে খুব সহজেই সুস্থ স্বাভাবিক শিশু জন্ম দিতে পারব এবং নিজেরাও সুস্থ থাকতে পারবো।